সাহায্য প্রয়োজন?
       ডিউটি অফিসার
: ০১৭৪৫৭৭৪৪৮৭, ০২-৪৮১১৮৫৪২
হটলাইন: ০১৩২০-০৪২০৮৫
ইমেইল
: vsc.dmp@dmp.gov.bd

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার পরিচিতি

একটি দোতলা ভবন। অত্যন্ত পরিপাটি করে সাজানো রয়েছে আটটি বিছানা, বিনোদনের জন্য রঙিন টেলিভিশন এবং ছোট একটি পার্কের মতো-যেখানে শিশুদের জন্য বেশ কিছু খেলনাও রয়েছে। রুমের মধ্যে রয়েছে আধুনিক শৌচাগারের ব্যবস্থা। এখান থেকে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দিচ্ছে। রাজধানীর তেজগাঁও থানা চত্বরে অবস্থিত এ আশ্রয়কেন্দ্রটিই হচ্ছে ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার’। নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের আশ্রয় বা থাকার জন্য পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির সহায়তায় পুলিশ এ ব্যবস্থা চালু করেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন।
মূলত পুলিশ রিফর্মস প্রজেক্টের আওতায় এ কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। আর এর অর্থায়ন করেছে ইউএনডিপি, ডিএফআইডি, ইউরোপীয় কমিশন ও বাংলাদেশ সরকার। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পুলিশের পাশাপাশি ১০টি এনজিও আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ করছে। এগুলো হচ্ছেঃ আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন ফর কারেকশন অ্যান্ড সোশ্যাল রেক্লেমেশন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ঢাকা আহছানিয়া মিশন ও মেরী স্টোপস্‌।
জানা গেছে, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের থাকার জন্য আটটি বেড রয়েছে, এখানে সর্বোচ্চ পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পরও যদি কোনো ভিকটিমকে থাকতে হয়, তাহলে তাকে সংশ্লিষ্ট কোনো এনজিওতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি যত দিন প্রয়োজন তত দিন থাকতে পারবেন। এ সেন্টারে ১০টি এনজিও রুটিন অনুযায়ী কাজ করে। যেমন-শনিবারে অপরাজেয় বাংলাদেশ, রোববারে জাতীয় মহিলা পরিষদ, বুধবারে ব্লাস্ট এবং বৃহস্পতিবারে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবীরা এখানে কাজ করেন।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মুখ্য উদ্দেশ্য হলোঃ ১· সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা দূর করে নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধ প্রতিবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করা। ২· ভিকটিমকে সময়োপযোগী ও পেশাগত সেবা প্রদান করা। ৩· ভিকটিমের সুরক্ষা ও আইনগত অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা। ৪· সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ভিকটিমের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা। ৫· ভিকটিমকে বারবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা। ৬· নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংরক্ষণ করা এবং অপরাধ নিবারণের জন্য কার্যকর নীতি তৈরি করা।
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ করে প্রতিকার পেয়েছেন ঢাকার আগারগাঁও (তালতলার) এক গৃহবধূ। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী যৌতুকের জন্য আমাকে নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে আমার বাচ্চাকে রেখে দেন। এই অবস্থায় আমি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ করলে তারা আমার বাচ্চাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়। আমাদের ভাঙা সংসারও এখন জোড়া লেগেছে।’ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) শামীমা পারভিন বলেন, ‘নির্যাতিত নারী ও শিশুদের জন্য এ কেন্দ্রটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এখানে মোট ২১ জন মহিলা পুলিশ কাজ করছেন। এর মধ্যে সহকারী কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত রয়েছে। তা ছাড়া প্রতিটি এনজিওর পক্ষ থেকে প্রতিদিন একজন করে আইনজীবী আসেন। চিকিৎসক ও কাউন্সিলরও উপস্থিত থাকেন। সব মিলিয়ে আমরা টিমওয়ার্কের মতো কাজ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমাদের কাছে কোনো ভিকটিম অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে খাতায় তার অভিযোগ লিপিবদ্ধ করি। এরপর ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করি। যাচাই শেষে দেখা হয় যে এটা আমলযোগ্য, না অ-আমলযোগ্য অপরাধ। এরপর আমরা সেভাবেই সামনে এগিয়ে যাই। আমরা ভিকটিমকে জানিয়ে দিই যে আপনার সামনে এই এই আইনগত পথ বা দিক রয়েছে। তখন ভিকটিমের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অধিকাংশ ভিকটিমই সংসার টিকিয়ে রাখতে মীমাংসার পথে যেতে চায়। তখন আমরা উভয় পক্ষকে ডেকে তাদের কথা মনোযোগসহকারে শুনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এ সময় আইনজীবী, চিকিৎসক, কাউন্সিলর, ডিউটি অফিসার ও আমি উপস্থিত থাকি। পরবর্তী সময়ে আমরা এটাকে টিকিয়ে রাখতে ঘটনার ফলোআপও করছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অর্থাৎ মারাত্মক ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থাও নিই।’
দুই মাসে এই সেন্টারে ৮৩ জন ভিকটিম এসেছে। এদের অধিকাংশ পারিবারিক নির্যাতনের শিকার। এ সংক্রান্ত তিনটি মামলা মিরপুর, আদাবর ও কোতোয়ালি থানায় তদন্তাধীন। এ পর্যন্ত কোনো মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি। তবে এর মাঝেও গাড়ির ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা পেলে তদন্ত কার্যক্রমসহ অন্যান্য কজের গতি বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টব্যক্তিরা জানান। আগামী জুন মাসে পিআরপির নতুন বাজেট হলে ছয়টি বিভাগীয় শহরেও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায় ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আসলে এটা শুধু পুলিশের একার কাজ নয়। এ ব্যাপারে অন্যান্য আইনগত ও মানবাধিকার সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি নতুন হওয়ায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। মাত্র দুই মাসের ভিকটিম সেন্টারের কার্যক্রমকে মোটামুটি সন্তোষজনক বলা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া কঠিন, তাই অন্তত বিভাগীয় শহরগুলোয় এটা ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।’
এ সম্পর্কে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা বলেন, ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার খোলা একটি অত্যন্ত প্রশংসিত উদ্যোগ। এখন এটাকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়মিত তদারক করা প্রয়োজন। এ সেন্টারকে কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি পুলিশ-ভীতি দূর করতে হবে।’
এ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহিদুল হক বলেন, ‘মূলত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার পুলিশ সংস্কার প্রকল্পের আওতায় করা হয়েছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। সম্ভব হলে এটাকে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠাব।’

 

নারী ও শিশু নির্যাতনের কথা শুনবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার শরীফা বুলবুল

 

ফরিদপুরের মেয়ে রাহেলা (২৫) (ছদ্মনাম)। এসএসসি পাস করার পর বিয়ে হয় একই এলাকার ছেলে ওয়াহিদের সঙ্গে। বিয়েতে রাহেলার বাবা আনুষঙ্গিক উপঢৌকনের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকাও দেন। কারণ ওয়াহিদ দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও বেশ মেধাবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স করার পর একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি শেয়ার ব্যবসা করেন। আরো বিনিয়োগের আশায় তিনি স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন বাপের বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য। কিন্তু এতে রাহেলা অসম্মতি জানাতেই তাঁর ওপর শুরু হয় অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন। এতে তাঁর কানের পর্দা ফেটে যায়। কণ্ঠনালীতে দেখা দেয় মারাত্দক সমস্যা। মায়ের ওপর অত্যাচার দেখতে দেখতে দুই শিশুসন্তানও এখন অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ। তারা বলে, চল মা এখান থেকে পালিয়ে যাই। দুই সন্তানের জননী রাহেলার বিবাহিত জীবন ১৩ বছরের। তাঁর বিয়ের পরপরই বাবা এবং বড়ভাই মারা যান। এক ধরনের অভিভাবকহীন রাহেলা স্বামীর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য ছুটে এসেছেন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।
রাহেলার মতো সমাজে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে পেশাগত সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ইউএনডিপি, ইউরোপিয়ান কমিশন এবং ডিএফআইর অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে এই ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সেন্টারটি উদ্বোধন করেন। যেখানে ২৪ ঘণ্টা ধরে সেবাপ্রত্যাশীরা সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ কর্তৃক কেন্দ্রটি পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ভিকটিমকে পেশাগত এবং সমন্বিত সেবা প্রদানের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইন সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন ফর কারেকশন অ্যান্ড সোস্যাল রেক্লেমেশন, অপরাজেয় বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, মেরী স্টোপস কাজ করে যাচ্ছে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভিকটিমের চাহিদা অনুসারে আইন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সহায়তার দীর্ঘমেয়াদি সেবার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার পেশাগত এবং সমন্বিত সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিল। যা পুলিশের তদন্ত কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এ প্রসঙ্গে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ কমিশনার মিনা মাহমুদা দৈনিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রতিদিন অসংখ্য নির্যাতিত নারী ও শিশু আইনি সহায়তা এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্য আসছে। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা নারী হওয়ার কারণে নারীরা অকপটে তাদের সমস্যার কথা খুলে বলতে পারছেন। যাতে করে আইনি সহায়তা এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে সেন্টারের কর্মকর্তাদের সহায়ক হচ্ছে। এছাড়া ১০টি এনজিওর পক্ষ থেকে কোনো না কোনো কর্মকর্তা সপ্তাহে দুই দিন অফিস ওয়ার্ক করছেন। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তার জন্য ৮টি সিট রয়েছে। যেখানে সোম ও মঙ্গলবার দুই দিন নিয়মিত ডাক্তার বসেন। অবস্থা তাঁদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকলে পিজি হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠিয়ে দেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু বয়স-ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এর মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক সামাজিক বাধা দূর করে নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধ রিপোর্টিংয়ের সুযোগ নিশ্চিত করা। ভিকটিমকে সময়োপযোগী এবং পেশাগত সেবা প্রদান করা। ভিকটিমের সুরক্ষা ও আইনগত অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমম্বয়ে ভিকটিমের সর্বোত্তম সেবা নিশ্চিত করা। ভিকটিমকে বারবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা। নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংরক্ষণ করা এবং অপরাধ নিবারণের জন্য কার্যকর নীতি তৈরি করা।
সেন্টারের সেবাসমূহ হচ্ছে : ভিকটিমকে সাদরে ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের তথ্য প্রদানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। ভিকটিমের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা ও সমস্যা চিহ্নিতকরণে সহায়তা করা। ভিকটিমের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা। এফআইআর করার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা। আইনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভিকটিমকে সঙ্গে অবহিত করা। জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা এবং প্রয়োজনে ভিকটিমকে সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়া। তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা করা এবং অগ্রগতি সম্পর্কে ভিকটিমকে অবহিত করা। ভিকটিমকে প্রয়োজনে ফোনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। মনোসামাজিক কাউন্সেলিং প্রদান করা। দীর্ঘমেয়াদি (শেল্টার, লিগ্যাল এইড, শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা, পরিবারে একত্রকরণ) সহায়তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় রেফার করা। বারবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করা। সর্বোচ্চ পাঁচদিন পর্যন্ত ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে অবস্থান করে সেবা গ্রহণ করা। যোগাযোগের ঠিকানা : ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার (তেজগাঁও থানা সংলগ্ন), তেজগাঁও, ঢাকা;
ফোন : ৯১১০৮৮৫, ০১৭৪৫৭৭৪৪৮৬

 

নির্যাতিতদের বাতিঘর

জিন্নাতুন নূররাজধানীর তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার নির্যাতিত নারীর বাতিঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এ সেন্টার থেকে ৮১১ জন নারী ও শিশু সাহায্য পেয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতায় নির্যাতিত নারী, আশ্রয়হীন গৃহকর্মী ও কমবয়সী নিখোঁজ শিশুরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আশ্রয় নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে দেশব্যাপী এই সেবা ছড়িয়ে দিতে ৬টি বিভাগীয় শহরেও চালু হবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। এ ছাড়া খুব শীঘ্রই রাঙামাটিতে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম। জানা গেছে, পুলিশের সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের যাত্রা শুরু হয় ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেন্টারটির দায়িত্বে আছেন একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার। এ ছাড়া তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকজন সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবল। নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশরাই কেন্দ্রটি পরিচালনা করেন। এ ছাড়া দশটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) মামলা, কাউন্সিলিং ও অন্যান্য আইনি সহায়তা দিচ্ছে। আট বছরের কমবয়সী ছেলেরাও এখানে আশ্রয় পায়। ভিকটিমদের অবস্থানের জন্য বিশাল একটি কক্ষে আটটি বেড রয়েছে। রয়েছে খাওয়া, বাচ্চাদের খেলাধুলা ও টিভি দেখার ব্যবস্থা। আশ্রিতদের পোশাকও দেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী একজন ভিকটিম পাঁচদিন এখানে থাকার সুযোগ পান। প্রয়োজনে কোনো শিশু বা নারী এর অধিক সময়ও অবস্থানের সুযোগ পেয়ে থাকেন। ২৪ ঘণ্টাই এ সেন্টার থেকে সেবা পাওয়া যায়। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনে ২৪২ নারী, প্রতারণার শিকার হয়ে ১৮ নারী-শিশু, নিখোঁজ হয়েছে ৪৪৮ নারী-শিশু, বাসা ত্যাগ করে একজন, গৃহকর্মী হিসেবে নির্যাতিত দুজন নারী, বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরী, অন্যান্যভাবে উদ্ধারকৃত নির্যাতিত ১২ নারী, অপহরণের শিকার হয়ে ২৬ নারী-শিশু এবং পাচারকৃত ৯ নারী-শিশু ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সেবা পেয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, থানায় মামলার বিষয়েও অনেকে এখানে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য দুজন, ধর্ষণজনিত কারণে ১৮ জন, শ্লীলতাহানির ফলে একজন, উত্ত্যক্তের কারণে একজন ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৩০ নারী-শিশু তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সেন্টারে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে সেখানে পাঁচ শিশু ও একজন নারী আশ্রিত আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী নির্যাতিত নারী-শিশুদের এ সেবা ছড়িয়ে দিতে ৬টি বিভাগীয় শহরেও চালু হবে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার। তাছাড়া খুব শীঘ্রই রাঙামাটিতে শুরু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম। তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারটির মতো অন্য সাতটি সেন্টারেও নারী পুলিশ সদস্যদের নিয়েই পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর মাধ্যমে নারী পুলিশ সদস্যদের কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ আরও বাড়বে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ কমিশনার মেরিন সুলতানা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক সহিংসতায় নির্যাতিত নারী ও গৃহকর্মী এবং কমবয়সী নিখোঁজ শিশুরা সেন্টারে আশ্রয় নেন। ঢাকার বাইরের বিভাগীয় শহরে নির্যাতিত ও অসহায় নারীরা যাতে একই সুযোগ-সুবিধা পান সেই লক্ষ্যে আরও সাতটি সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের নির্যাতিত নারীদের নিয়ে কাজ করে এ রকম কিছু এনজিও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সঙ্গে কাজ করছে। ফলে নির্যাতিতরা নিশ্চিতরূপেই এ প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্য পায়।